হাওয়া মুভি রিভিউ | যে মুভি দেখলাম – পর্ব ০১
গত শুক্রবার দেখে আসলাম হাওয়া।
একটা গান থেকে খুব বেশি হাইপ পাওয়ায় আমার এই মুভি নিয়ে এত আগ্রহ ছিল না। আমি হাওয়ার ট্রেইলার পর্যন্ত দেখিনি।
কিন্তু সিলেটের প্রথম সিনেপ্লেক্সে এই হাওয়া দিয়েই তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে বিধায় এই মুভিই দেখতে গেলাম।
এবং হাওয়া দেখতে যাওয়াটা একটা ভালো ডিসিশন ছিল। আসলেই। পুরোটা সময় এত ভালো উপভোগ করেছি কি বলব!
হাওয়া সিনেমার ট্রেইলার
প্রথমেই বলে রাখি, আমি সিনেমা হলে খুব কমই মুভি দেখেছি। সিলেটের নন্দিতায় কয়েকটা দেখেছি, কিন্তু কখনো সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখা হয় নি।
কোন সিনেপ্লেক্সে আমার দেখা প্রথম মুভি – হাওয়া। আগেই বলছিলাম – এই মুভি নিয়ে এত হাইপ হলেও আমি খুব বেশি ইন্টারেস্টেড ছিলাম না। দেখতে গিয়েছিলা এই ধারনা নিয়ে — একটা এভারেজ মুভি দেখব।
এই ধারণা নিয়ে যাওয়ায় আমার জন্য ভালোই হয়েছে। খুব বেশি এক্সপেকটেশন নিয়ে দেখতে না যাওয়ায় মুভিটি ভালো মতো উপভোগ করতে পেরেছি।
হাওয়া মুভিটিতে যেসব জিনিস আমার ভালো লেগেছে তা আমি পয়েন্ট ধরে ধরে এই লেখায় উল্লেখ করব।
চলুন শুরু করা যাক-
চেষ্টা ও সাহস
এই ছবি দেখতে দেখতে প্রথমেই আমার মাথায় যা আসছে তা হলো পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমনের এই গল্পটাকে অসাধারণ ভাবে পর্দায় তুলে ধরার প্রচেষ্টা। একই সাথে সাহস।
সিনেমা হলে বসে যেন আমি মেজবাউর রহমান সুমনের এই ছবি বানানোর পেছনে সংগ্রামটা কল্পনা করছিলাম। না জানি কিরকরম পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে তাকে যেতে হয়েছে।

এরকম একটা গল্প প্রযোজককে খাইয়ে ইনভেস্ট করার মতো টাকা আনা, এমন অভিনেতাদের অভিনয় করতে রাজি করানো (চিন্তা করুন উত্তাল সাগরে এতদিন শুটিং!), এরপর আবার শুটিংয়ের ব্যবস্থা করা, ছবি বানানোর পর সেটার বাজারজাত সবকিছু। উনার এই প্রচেষ্টাকে লাল সালাম।
একই সাথে প্রযোজককে ধন্যবাদ ছবিটি লগ্নি করার। আর যারা অভিনয় করেছেন তাদের কথা আর কি বলব! পুরাই ফাটাই দিছে!
অভিনয়
হাওয়া মুভিতে যারা অভিনয় করেছেন তারা একেকজন অভিনয়ে জানপ্রান ঢেলে দিয়েছেন। প্রথমেই যার কথা বলতে হয়, অবশ্যই চঞ্চল চৌধুরী।
এই মানুষটা যেন প্রতিটা চরিত্রের জন্য নিজেকে ভাংছে আর নিজেকে গড়ছেন! নিজের অভিনয় দিয়ে একদম স্ক্রিনের সাথে চোখটাকে আটকে রেখেছিলেন আমার! এই চরিত্রের জন্য এইবার হয়ত জাতীয় পুরষ্কার পেয়েও যেতে পারেন চঞ্চল চৌধুরী।
শরীফুল ইসলাম রাজ অনেক দূর যাবেন। যদি উনি পরিমনীর মতো মাথা নষ্ট হয়ে পাগলামি না করলেই হলো।
নাজিফা তুষি তার চরিত্রের যা প্রয়োজন ছিল সেটুকুই ফুলফিল করেছেন। উনার উচিত হবে এই মুভির সফলতায় নিজেকে সামলে নিয়ে বৈচিত্র্যময় চরিত্র করা। একটা ভালো অবস্থানে যেতে উনার সময় লাগবে। গ্ল্যামার দিয়ে নায়িকা হওয়া যাবে, কিন্তু অভিনয় ছাড়া অভিনেত্রীদের কাতারে সামনে থাকা যাবে না।
অন্যান্য চরিত্রে যারা ভালো করেছেন ভালো করছেন – সোহেল মন্ডল, নাসির উদ্দিন খান, সুমন আনোয়ার ও রিজবী রিজু। তাদের অভিনয় চোখে লেগে ছিলো। আসলে হাওয়া সিনেমায় তাদের সবার অভিনয় দেখে আমার মনেই হয় নি যে অভিনয়, একদম ন্যাচারাল সবকিছু। মনে হয়ে আসলেই এনারা জেলে, প্রতিদিন সকালে উঠে সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়। চরিত্রগুলো এমনই জীবন্ত ছিল!
গল্প ও পরিচালনা
হাওয়া মুভির গল্প নিয়ে যদি কিছু বলতে হয় প্রথম দিকে সবারই মনে হবে এই গল্প তো এমন কি, একদম এভারেজ। কিন্ত আপনি যখন হলে বসে এই মুভি দেখবেন, সংলাপ গুলো শুনবেন, প্রতিটা সিনে আপনার চোখ আটকে যাবে। ক্যামেরার সিনেমাটোগ্রাফি আপনাকে ওই জায়গায়, ঐ মুহূর্তে নিয়ে যাবে।
এমনকি হাওয়া চলচিত্রের লাস্টের সিনের সিনেমাটোগ্রাফি দেখে, শট নেওয়াটা দেখে আমার স্ত্রী আমাকে কনুইয়ে গুতো দিয়ে বলছিলো, এই দেখো দেখো ক্যামেরার এই এংগেলের শটটা দারুন না!
গল্প নিয়ে অনেকে বলছে টা কি হলো একদম শেষে?! আসলে ফিল্মের শেষটার পুরোটা উনি দর্শকদের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। এখন আপনি যদি মনে করেন এন্ডিংটা অবাস্তব, ফ্যান্টাসী – তাহলে সেটা সেটাই। আর নাহলে লজিক্যাল যেটা মনে আসবে সেটাই।
পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমনের মুন্সিয়ানা এখানেই। উনি টিকে গেলে অনেক দূর যাবেন। উনার সামনের সব মুভিই আমি দেখব বলে ঠিক করলাম।
হাওয়া সিনেমার গান
হাওয়া সিনেমার গান নিয়ে আমার বলার কিছু নাই। সাদা সাদা কালা কালা গানটা খুব ভাইরাল হলেও আমার মেঘদলের এই হাওয়া গানটা খুব ভালো লেগেছে।
যদিও মুভিতে অফিশিয়াল গানের ট্র্যাক মাত্র তিনটা। আটটা বাজে দেরি করিস না তেমন আরেকটা গান-
হাওয়ার সফলতা
হাওয়া মুভি সিনেমা হল আর সিনেপ্লেক্স গুলোতে দারুন চলছে। ছবিটি যে পরিমাণ হাইপ পেয়েছে, এই হাউজফুল শো হওয়ারই ছিল। এক গানেই ভাইরাল। আর তুষির কিছু আবেদনময়ী ছবিও হাওয়ার ভাইরালিটি উসকে দিয়েছে।
তবে দিনশেষে গল্প আর নির্মাণে হাওয়া মুভি অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গিয়েছে। এটাই হাওয়া ছবির সফলতার আসল উপাদান।
এই মুভির লগ্নির টাকা অলরেডি উঠে গেছে।এখন নাকি বাইরের দেশেও মুক্তি পাবে! হাওয়া মুভি আরো টাকা আয় করুক। এটাই চাই। বাংলা চলচিত্র আরো এগিয়ে যাক।
সিলেটের প্রথম সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখার অভিজ্ঞতা
এখন শেয়ার করি সিলেটের প্রথম সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখার অভিজ্ঞতা, কেমন ছিল মুভি থিয়েটার।
প্রথমেই জেনে নিন, এই সিনেপ্লেক্স গ্রান্ড সিলেট নামের একটা ফাইভ স্টার হোটেলের এক্সটেনশন হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। আমাদের মতো মধ্যবিত্ত এখানের টার্গেট শ্রেনী না।
টিকেটের দামই ৪০০-৫০০! সিনেমা হলের ইকুইপমেন্ট ও সাউন্ড এমন আহামরি কিছু না। তবে একদম এভারেজও না। ১৭০ এর মতো আসন মনে হয় আছে।
তবে সিলেটের প্রথম সিনেপ্লেক্স বলে কথা। যেখানে আরামসে ফ্যামিলি নিয়ে আসা যাবে। মুভি উপভোগ করা যাবে। খোলার পর থেকেই হাইপে ছিল মুভি থিয়েটারটা। প্রথমে শুধু বুফে খেতে আসা ও হোটেলের লোকদের জন্য খোলা ছিল।
পরে উদ্ভোধনের পর বাইরের লোকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। তাদের প্ল্যানিংয়ে অনেক ঘাটতি আছে। আশা করি ঘাটতিগুলো শীঘ্রই কাটিয়ে ফেলবে তারা।
আমি অপেক্ষায় আছি হলিউডের মুভির, কবে তারা ইংরেজি মুভি আনবে অফিসিয়ালি আর আমরা বাইরের দুনিয়ার সাথে নতুন মুক্তি পাওয়া মুভি দেখতে পাব! ডিসি আর মার্ভেল গুলো দেখতে চাইই চাইই!
বাই দা রাস্তা, অভিজ্ঞতার কথা বলছিলাম। কিছু তিতা কথা না বললেই না। কিছু প্যারেন্টসদের দেখলাম নিজের ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে হাওয়া দেখতে আসছেন। আচ্ছা, এরা কি মুভির ট্রেইলারটা দেখে নাই? এই বড়দের ছবি দেখতে এরা বাচ্চা নিয়ে আসে কিভাবে। পুরো মুভি দেখার সময় ডায়ালগ ও ভায়োলেন্স সিনে আমি বাচ্চাদের উপস্থিতিতে খুবই আনকমফোর্টেবল ফিল করছিলাম। আমাদের এইসব প্যারেন্টসের এই কমনসেন্স কবে আসবে?!
এটা নিয়ে আরো গভীর আলাপ প্রয়োজন।
যাকগে, আপনার আশেপাশের সিনেমা হল বা সিনেপ্লেক্সে যদি হাওয়া চলতে থাকে তাহলে আমি হাইলি রেকমেন্ড করব — হলে গিয়ে হাওয়া মুভি দেখে ফেলতে। খুব বেশি এক্সপেকটেশন নিয়ে যাবেন না। তাহলে অবশ্য খুব বেশি উপভোগ করতে পারবেন না। তখন আবার আমাকে গালি দিয়েন না রে ভাই!
এইই হাওয়া, চলুক!

পড়ুন নিশাত শাহরিয়ারের অন্যান্য লেখাঃ
- আমি | কবিতা
- টাকা দিয়ে মোটিভেশনাল সেমিনার এটেন্ড করা মানেই ফাউল? ধান্দাবাজি? | বাঁকা চোখে
- বইয়ের পাতায়, বইয়ের ঘ্রানে……ও আমার সোনালি দিন!
- শেরি | উপন্যাস | প্রথম পর্ব
- আমার লাইব্রেরি | বইয়ের তালিকা
- বিরামচিহ্ন | কবিতা
- মধ্যরাতের পঙতিমালা
| অনু কবিতা
- এবং “বিয়ে”
- ওরা রোদ্দুর হতে চেয়েছিল | কবিতা
- আমার এই আঙিনায় তোমার পায়ের ছাপ কখনো পড়বে না! | কবিতা
- যে বই পড়লামঃ জুবোফ্স্কি বুলভার- মশিউল আলম | পাঠ প্রতিক্রিয়া | বুক রিভিউ
- হেই ফেলিসিয়া! | কবিতা
- পপুলার হওয়া আর বিখ্যাত হওয়া দুইটা দুই জিনিস | উক্তি ১
- ফিলিস্তিনিদের জন্য হ্যাশট্যাগ কতটা কার্যকরী?
- ইন্ট্রোভার্ট লিডারশীপ, ফ্যামিলি ম্যান সুপারম্যান, ফ্রি প্যালেস্টাইন | নিশনামা ডাইজেস্ট ০১
- ভূমিকম্প, গলফারদের ধৈর্য্য, সিলিকন ভ্যালী, লায়োনেল মেসি | নিশনামা ডাইজেস্ট ০২
- ইস্যুময় ফেসবুক, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও ইসরো | নিশনামা ডাইজেস্ট ০৩
- এসো বেদুইন হই, জব লাইফ, সম্পূর্না ও লোকি | নিশনামা ডাইজেস্ট ০৪
- লকডাউন, ওয়ার্ডপ্রেস ডিল, ক্রিয়েটিভিটিরও দাম আছে! | নিশনামা ডাইজেস্ট ০৫
- ট্র্যাজেডি, জাপানের বাচ্চারা ও আত্নবিশ্বাসী নারী | নিশনামা ডাইজেস্ট ০৬